সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সমাজকর্মের সাথে মনো বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনাদের মধ্যে যারা সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক
পেজ সূচিপত্রঃপ্রশ্নঃ সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক | সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক গুলো তুলে ধর | সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক গুলো উল্লেখ কর | সমাজ কর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সাদৃশ্য সমূহ লিখ।

ভূমিকাঃ 

মানুষের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কের দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞান থেকে জ্ঞান আহরণ করে সমাজকর্মীদের মাধ্যমে তা মানবতার কল্যাণে নিবেদন করে। সমাজকর্মীরা মনোবিজ্ঞানের সকল বিষয়ের উপর জ্ঞান আহরণ করার মাধ্যমে সকলের সমাজের মানুষের কল্যাণের কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মনোবিজ্ঞানের মাধ্যমে সমাজকর্মীদের সকল কাজে অনেক সাহায্য সহযোগিতা হয়।

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কঃ 

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কের দিকগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। তাহলে চলুন সমাজ কর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক সম্পর্কে নিচে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

১। উভয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তঃ মনোবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয় সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত দুটি শাখা। উভয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একে অপরের সহায়তা করা সহজ স্তর হয়েছে/ফলে একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ। এ সম্পর্কের সুবাদে এদের জ্ঞানকে মানুষের প্রয়োজনে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে।

২। অভিন্ন বিষয়বস্তুঃ মানুষের আচরণ নিয়ে সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু আবর্তিত। সমাজকর্ম মানুষের আচরণকে স্বাভাবিক অবস্থানে রাখতে চায়। মনোবিজ্ঞানেরও প্রধান আলোচ্য বিষয় আচরণের স্বাভাবিকতা। এভাবে দেখা যাচ্ছে বিষয়বস্তুর দিক থেকেও উভয়ে এক ও অভিন্ন।

৩। কল্যাণমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নেঃ সমাজের কল্যাণে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সমাজকর্মীদের অন্যতম কাজ। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা লব্ধ জ্ঞান কল্যাণমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করে। ফলে উভয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

৪। সমাজকর্মীদের পরামর্শঃ অপরের আচরণকে নিয়ন্ত্রণের আগে নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিভাবে সমাজকর্মীরা নিজেদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মক্কেলের সাথে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে সেই ব্যাপারে মনোবিজ্ঞান পরামর্শ দিয়ে থাকে।

৫। তথ্য সংগ্রহ করাঃ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। মনোবিজ্ঞানে তথ্য তথ্য সংগ্রহের উপর ব্যাপক আলোচনা হয়। তাই তথ্য সংগ্রহের জন্য সমাজকর্মকে মনোবিজ্ঞানের সহযোগিতা নিতে হয়।

৬। হতাশা দূর করতেঃ মানুষের হতাশা দূর করতে মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজকর্মেও মানুষের হতাশা দূরীকরণের মাধ্যমে সুষ্ঠু সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলে। আর এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞান সমাজকর্মকে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। ফলে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন যাপনের সক্ষম হয়ে ওঠে।

৭। জনমত ও উদ্বুদ্ধকরণঃ সমাজকর্মের একটি অন্যতম দিক হলো জনগণকে প্রাধান্য দেয়া এবং তাদের সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করা। মনোবিজ্ঞানে জনমত ও উদ্বুদ্ধকরণের উপর ব্যাপক আলোচনা হয়। কাজেই এক্ষেত্রেও দেখা যায়, তাদের মধ্যে যথেষ্ট মিল ও সম্পর্ক রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম কি
৮। সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশঃ কিভাবে মানুষের সত্য ক্ষমতাকে বিকশিত করা যায় সেই লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে থাকে। সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশের ব্যাপারে মনোবিজ্ঞান সমাজকর্মকে সহায়তা করে থাকে। বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যমে সুপ্ত ক্ষমতা সম্পর্কিত ধারণা লাভ করা যায়।

৯। ব্যক্তি ও পরিবেশের উন্নয়নেঃ সমাজকর্ম ব্যক্তি ও পরিবেশের উন্নয়ন চাই। ব্যক্তির সমস্যা সমাধান ও অনুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজকর্ম সুন্দর পৃথিবী করতে চাই। সুন্দর পৃথিবী গড়তে ব্যক্তি ও পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য সমাজকর্মকে মনোবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।

১০। অস্বাভাবিক আচরণঃ মানুষের অস্বাভাবিক আচরণের পরিবেশ বিনষ্ট হয়। ব্যক্তি সমাজে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সমাজকর্ম সর্বদা চেষ্টা করে থাকে। মনোবিজ্ঞানেও অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ব্যক্তির আচরণ স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য কৌশল অবলম্বন করা হয়। তাই এদিক থেকে এদের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে।

১১। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জ্ঞান সমাজকর্মকে সহায়তা করেঃ পেশাদার সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জ্ঞান অপরিহার্য। যেমন শিশু কল্যাণে শিশু মনোবিজ্ঞান রোগীর কল্যাণে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়।

১২। সমস্যা চিহ্নিতকরণঃ সমাজের অনেক সমস্যার পেছনে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক উপাদানের প্রভাব। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়।

১৩। সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়াঃ সমাজকর্ম নিজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থাৎ সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির দল বা সমষ্টির সমস্যা মোকাবেলা করে থাকে। মনোবিজ্ঞানের সহায়তা ছাড়া এ প্রক্রিয়ায় সফলতা অর্জন করা সমাজকর্মের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।

১৪। আবেগ ও আচরণের নিয়ন্ত্রণঃ আবেগ ও আচরণের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মানুষ সমাজে সুন্দরভাবে বসবাস করতে সক্ষম হয়। তাই সমাজকর্মে এর প্রয়োজন অপরিহার্য। মানুষের আবেগ ও আচরণ সংক্রান্ত জ্ঞান সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞান থেকে অর্জন করে থাকে।

উপসংহারঃ 

পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজকর্ম কতগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি দল ও সমষ্টি সমস্যা সমাধান করে থাকে। আর মনোবিজ্ঞান ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করে থাকে। সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞানের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। সমস্যা সমাধানের প্রতিটি ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের সহায়তা প্রয়োজন। তাই সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কের গভীরতা সহজেই পরিমাপ করা যায়।

আমাদের শেষ কথা,

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের এই আর্টিকেল থেকে আশা করছি সকল কিছু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url