দর্শনের সংজ্ঞা দাও | দর্শন কাকে বলে

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে দর্শনের সংজ্ঞা দাও এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনাদের মধ্যে যারা দর্শনের সংজ্ঞা দাও এই বিষয় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন দর্শনের সংজ্ঞা দাও এ বিষয়ে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দর্শনের সংজ্ঞা দাও
পেজ সূচিপত্রঃদর্শন কি | দর্শন কাকে বলে | দর্শনের সংজ্ঞা দাও 

ভূমিকাঃ 

প্রতিটি বিজ্ঞানের ওই রয়েছে দার্শনিক ভিত্তি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাণিবিদ্যা প্রাণের স্বরূপ, পদার্থবিদ্যা, পদার্থের স্বরূপ, সমাজবিজ্ঞান সমাজের স্বরূপ, মনোবিজ্ঞান মনের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিজ্ঞানই কোন না কোন দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর দর্শনকে বলা হয় সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান। সুতরাং দর্শনের সাথে সকল বিজ্ঞানের ওই সম্পর্ক রয়েছে। দর্শন হলো বিজ্ঞানের মাতা। কাজেই সামাজিক বিজ্ঞানের একটি বিষয় হিসেবে সমাজকর্মের সাথেও দর্শনের সম্পর্ক রয়েছে।

দর্শনঃ 

দর্শনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Philosophy. এটি গ্রিক শব্দ 'Philo' এবং 'Sophih' থেকে উদ্ভূত হয়েছে। গ্রিক শব্দ Philo এর অর্থ অনুরাগ এবং Sophih অর্থ জ্ঞান। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে Philosophy শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। অন্যভাবে বলা যায়, জগৎ বা মহাজগতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জ্ঞান অন্বেষণের স্পৃহায় হলো দর্শন।

সাধারণ অর্থে দর্শন হলো এমন একটি শাস্ত্র যা জীবন, জগত ও মহাজগতের নানাবিধ বিষয়গুলি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করে ও তার মূল্য নিরূপণের চেষ্টা করে। সৃষ্টি জীব, জগত ও মহাজগতের সমস্ত কিছুর কি ও কেন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দর্শন এবং সেই আলোকে এগুলো সম্পর্কে সচিন্তিত মতামত ও ব্যাখ্যা প্রদান করে।

দর্শন কি?

দর্শন হলো মানব জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলি উপর ভিত্তি করে তার প্রস্তুতি, স্বরূপ, মূল্যায়ন, এবং মৌলিক বিশ্ববিদ্যা বা তত্ত্বের একটি বিষয়। দর্শন মৌলিকভাবে ধারাবাহিক, বৈজ্ঞানিক, মানবিক, এবং সামাজিক বিষয়ে আলোচনা করে।দর্শনের কাজ মৌলিক প্রশ্নের উপর মনোযোগ দেওয়া, তার উত্তর খোঁজা, এবং মানবজীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলির সাথে সংলগ্ন একটি সার্থক তত্ত্ব প্রস্তুত করা। দর্শনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

যে কোনও বিষয়ের প্রশ্ন এবং তাত্ত্বিক, তার্কিক, এবং নৈতিক দিকে মনোযোগ দেওয়া হতে পারে।দর্শনের মাধ্যমে মানবজীবনের মূল্যবোধ, নীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, সৃষ্টিবাদ, তত্ত্ব, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিচার করা হয়। এটি মানবজীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলির প্রতি মানব চিন্তার সাধারণ ক্রমকে উন্নত করতে বা মোক্ষের পথে মানবজীবনের উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য কাজ করে।

দর্শন কাকে বলে?

"দর্শন" শব্দটি বাংলা ভাষায় "চিন্তন, বিচার, মূলতঃ জীবনের সার্থকতা এবং মূল প্রশ্নের প্রতি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ বা দৃষ্টিভঙ্গি" অথবা "বৈচারিক এবং ধার্মিক ধারণা এবং তাদের মৌলিক বিষয়বস্তুতা বা তত্ত্বের সমৃদ্ধি" দেওয়া হয়। এটি মূলত মানব বিচার, ধর্ম, এতিহাসিক এবং সাহিত্যিক প্রতি একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ বা ধারণার সাথে যুক্ত করা হয়। দর্শনে সাধারণভাবে মানুষের জীবন, বিশ্ব, মানব বুদ্ধিতত্ত্ব, মর্মজ্ঞান, নীতি, ধর্ম, অদৃশ্য বা অতীন্দ্রিয় প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়বস্তুতে বিচার এবং আলোচনা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ সমাজ কল্যাণ কি

দর্শনের জনক কেঃ 

দর্শনের জনক বা দর্শনশাস্ত্রের জনকের কথা নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে, কারণ দর্শন বা দর্শনশাস্ত্র বিভিন্ন সংস্কৃতি, সম্প্রদায়, এবং ধারাবাহিক বিচারে উত্পন্ন হয়েছে। তবে, বৃহত্তর পরিসংখ্যানে প্রথম দর্শনশাস্ত্রিক বা দর্শনের জনক হিসেবে অক্ষণ্ণবতী ভগবান বুদ্ধ অথবা গৌতম বুদ্ধকে মনে করা হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধ হলেন ভগবান বুদ্ধের অনুযায়ী দুঃখ, জন্ম, জরা, মৃত্যু এবং সংসারের চক্রের কঠিন জটিলতা থেকে মোক্ষের দিকে মানবকে পোষণ দেওয়া উচিত। বুদ্ধধর্ম ভারতীয় দর্শনের একটি প্রধান শাখা হিসেবে অধিক প্রসারিত হয়েছে এবং এটি একটি প্রতিরক্ষা বা উপায় হিসেবে মোক্ষের দিকে মানবজীবন পথে জীবনাদর্শের সঙ্গে জড়িত হয়েছে।

তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিভিন্ন ধর্মগুলি এবং দর্শনের সংস্কৃতি বিভিন্নভাবে জীবনদর্শন করে এবং দর্শনের জনক হিসেবে ভগবান বুদ্ধ মাত্র প্রমুখ নয়। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দুধর্মে মন্য জনক হিসেবে শঙ্করাচার্য্য, পরমহংস থাকতে পারে। বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সম্প্রদায়ের ভিন্ন প্রতিষ্ঠাতা ও ধারাবাহিক ইতিহাসের কারণে এই ধর্মগুলির জনকের উপর মতভেদ দেখা হয়েছে।

প্রামান্য সংজ্ঞাঃ 

বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে দর্শনের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। দর্শন এর একটি সংজ্ঞা নিচে প্রদান করা হলো। তাহলে চলুন দর্শনের সংজ্ঞা জেনে নেয়া যাক।

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার তার 'History and Philosophy' গ্রন্থে বলেন, দর্শন হলো প্রকৃতির বিষয় সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা লাভের অনুসন্ধান ও বস্তুর সামগ্রিক ব্যাখ্যা দানের প্রচেষ্টা।

দর্শন হলো একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি, মৌলিক ধারাবাহিক ও সাধারণভাবে একটি তত্ত্ব বা মতাবধি যা মানুষের জীবন, বিশ্বব্যাপী অথবা মানুষের সাংসারিক ও মানবিক সমস্যা সমাধানের জন্য আদর্শ অথবা উপযোগী মানববিচারের মাধ্যমে স্থাপিত হয়। দর্শনের মাধ্যমে মানুষ তার জীবনদৃষ্টি, মৌলিক নীতি এবং মূল তত্ত্বের সাথে যোগাযোগ করে এবং মানুষের ব্যক্তিত্ব।

সমাজ এবং বিশ্বের সমস্যার সমাধানের উদাহরণ দেখতে পারে।বিশ্বে বিভিন্ন দর্শনাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং এগুলি মূলত মানবজীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলির সমাধানে দিকনির্দেশ করতে চেষ্টা করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পারম্পরিক ধারাবাহিকতা, মতবাদ এবং মৌলিক ধারাবাহিকতা বিকল্প দর্শনাত্মক পথ প্রদান করে।

উপসংহারঃ 

পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের এ জগত, প্রাণীকূল ও মহাজগত সহ যা কিছু মানুষের নিকট কি এবং কেন এ প্রশ্ন কারে উত্থাপিত হয় মানব সমাজে বোধগম্য করে তোলায় দর্শনের মূল উপজীব্য বিষয়।মানবজীবনের একটি মৌলিক প্রশ্ন বা বিচারের দিকে বা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিস্থিতি দেখতে যখন আত্মবিশ্লেষণ অথবা মানব বিচারের উদ্দীপনা আছে।
আরো পড়ুনঃ সমাজসেবা কি

আমাদের শেষ কথা,

দর্শনের সংজ্ঞা দাও এই বিষয় সম্পর্কে আশা করছি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিষ্কার ভাবে পরিপূর্ণ বিষয়ে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাহলে সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url