সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভালো আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
আপনাদের মধ্যে যারা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক অবশ্য তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সমূহ কি কি।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সমূহের নাম লিখ।
সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম গুলো উল্লেখ কর।

ভূমিকাঃ 

সামাজিক নিরাপত্তা বর্তমানকালে একটি অপরিহার্য ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি হিসেবে স্বীকৃত। এটি আধুনিককালে মানুষের জীবনে অদৃষ্ট পূর্ব অবস্থার হাত থেকে রক্ষা ও সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের তরফ থেকে একটি সহায়তা মূলক কর্মসূচি। সামাজিক নিরাপত্তা ধারণার সঙ্গে শিল্পত্তর যুগের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সামাজিক নিরাপত্তা প্রত্যয়টি বিশ্লেষণ করলে কতগুলো বিষয় বের হয়ে আসে।

সামাজিক নিরাপত্তার ও প্রকারভেদ বা কর্মসূচি সমূহঃ 

সামাজিক নিরাপত্তাকে সাধারণত সামাজিক বীমা ও সামাজিক সাহায্য কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। বর্তমান কালে সমাজসেবা কেউ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সামাজিক বীমা ও সামাজিক সাহায্যকে নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করা হলোঃ-

ক. সামাজিক বীমা কর্মসূচিঃ-

১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এর সুপারিশক্রমে কর্মচারীদের কল্যাণে কর্মচারী সামাজিক বীমা ব্যবস্থা চালুর আইন অনুমোদন করে। এ আইন অনুযায়ী অসুস্থতা সুবিধা মাতৃত্যসুবিধা কর্মচারী দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির সুবিধা ইত্যাদি দেওয়ার বিধানচাল হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে যেসব কর্মসূচি বীমা কর্মসূচির আওতাভুক্ত তা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ-

১। ভবিষ্যৎ তহবিল কর্মসূচি বা প্রতিভেন্ড ফান্ড  কর্মসূচিঃ 

১৯২৩ সালের প্রতিভেন্ড ফান্ড আইনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এই কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। এই কর্মসূচিতে সরকারি কর্মচারীরা বাধ্যতামূলকভাবে তাদের মাসিক বেতনের একটা নির্দিষ্ট অংশ প্রতিবেদ ফান্ডে জমা প্রদান করে। এই জনকৃত টাকা অবসরকালীন সময়ে বিধি অনুযায়ী কর্মচারীরা পেয়ে থাকেন। এই তহবিল হতে কর্মচারীরা আর্থিক বিপর্যয়কালীন ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। বেসরকারি পর্যায়ে তা পেনশনের সাথে সংযুক্ত করে কিংবা কর্মচারীরা চাঁদার দ্বিগুণ হারে অবসর গ্রহণ কালে প্রদান করা হয়।

২। যৌথ বীমা গ্রহণ বা গ্রুপ ইন্সুরেন্স কর্মসূচিঃ 

১৯৬৯ সালে সরকারি কর্মচারীদের কল্যাণে গ্রুপ ইন্সুরেন্স কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। এই কর্মসূচিতে কর্মচারীরা দলগতভাবে গ্রুপ ফান্ডে জাদা প্রদান করে এবং কর্মকালীন সময়ে যদি কোন কর্মচারীরা মৃত্যুবরণ করে তবে তার পরিবার এর দ্বিগুণ অর্থ লাভ করে।

৩। শ্রমিক ক্ষতিপূরণঃ 

১৯২৩ সালে শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইনের আওতায় কর্মরত শ্রমিকদের দুর্ঘটনা মৃত্যু বা কর্মক্ষমতা লোপ পেলে আর্থিক সাহায্য দানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে 1957 ও 1980 সালে উক্ত আইনের সংশোধন করা হয়। বর্তমানে এ আইনে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক মজুরি প্রাপ্ত শ্রমিকের দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু পূর্ণ বা আংশিক ক্ষমতা লোপের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।

৪। মাতৃত্ব সুবিধাঃ 

মাতৃক কল্যাণ সুবিধার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ১৯৩৯ সালের বঙ্গীয় মাতৃক কল্যাণ আইন 1950 সালের পূর্ব বঙ্গ মাতৃক কল্যাণ আইন ও সরকারি কর্মচারী মাতৃত্ব সুবিধা চালু রয়েছে। এই আইনের আওতায় কর্মজীবী মহিলারা সন্তান জন্মের পূর্বে ছয় সপ্তাহ ও পরে ছয় সপ্তাহ বেতনসহ ছুটি ও আর্থিক সুবিধা লাভ করে। চা বাগান আইন শুধুমাত্র চা বাগান ও চা উৎপাদনের কারখানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ আইনে সন্তান জন্মের পূর্বে ওপরে প্রসবকালীন ভাতা ও প্রসবকালে মৃত্যুতে আর্থিক সাহায্যে ধানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া এই আইনে সরকারি মহিলা কর্মচারীরা মাতৃত্ব সুবিধা হিসেবে সর্বোচ্চ পূর্ণ বেতন সহ তিন মাস মাতৃত্ব সুবিধা ভোগ করতে পারে।

৫। অবসরকালীন ভাতা বা পেনশনঃ 

চাকরির বয়স সীমা অতিক্রম করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর নির্দিষ্ট হারে অবশিষ্ট জীবন পেনশন ভাতা পেয়ে থাকেন। তাছাড়া একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চাকরি করার পর স্বেচ্ছায় চাকরি হতে অবসর গ্রহণ করা যায়। সাধারণত অবসর গ্রহণ করার সময় কর্মচারীগঞ্জে মাসিক বেতন পেতেন অবসর গ্রহণ করার পর থেকে পেনশন বা ভাতা হিসেবে সে মাসিক বেতনের অর্ধেক পেতে থাকেন। মাসিক পেনশন এর টাকার চার ভাগের একভাগ পর্যন্ত পেনশনভোগী কর্মচারী প্রতি টাকার পেনশন ছাড়ার জন্য ১২৫ টাকা হারে এককালীন সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারেন।

৬। কল্যাণ তহবিলঃ 

১৯৬৮ সালে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের এ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরাও চাকরি কালীন সময়ে নির্দিষ্ট হারে তহবিলে অর্থ জমা দেয় এবং অবসরকালে তাদের পরিবারকে এ ধরনের অনুদান হিসেবে সাহায্য দান করা হয়।

খ. সামাজিক সাহায্যঃ 

বাংলাদেশের সামাজিক সাহায্য কার্যক্রম অংশ গঠিত অপর্যাপ্ত ও নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়। আমাদের দেশে সামাজিক সাহায্যের ধরন গুলো হলঃ- 

বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি, অতি বৃষ্টি, নদী ভাঙ্গন জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির সমস্যায় প্রাণ ও পুনর্বাসন মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সাহায্য প্রদান করা হয়।

দরিদ্র এতিম বিধবা পঙ্গু অক্ষম জনগোষ্ঠীকে অনিয়মিত ও অংশ গঠিতভাবে যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় তাই সামাজিক সাহায্যর পর্যায় ভুক্ত। 

গ. সমাজসেবাঃ 

আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি স্বাধীনতা তত্ত্বকালীন হতে চালু রয়েছে।

উপসংহারঃ 

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে সামাজিক সাহায্যের কতগুলো দুর্বল দিক রয়েছে। সামাজিক সাহায্য অনেকটা ভিক্ষার শামিল। সামাজিক সাহায্য অনেকটা পর নির্ভর শ্রম বিমুখ ও অলসতা সৃষ্টি করে। এটি আত্মনির্ভরশীলতার পরিপন্থী। সামাজিক নিরাপত্তা একটি সাময়িক ব্যবস্থা। সামাজিক সাহায্যের ও উপযুক্ত দুর্বল দিক থাকা সত্ত্বেও ও উন্নত ও দরিদ্র দেশের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সামাজিক সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

আমাদের শেষ কথা,

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিষ্কারভাবে সম্পূর্ণ বিষয় বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url