সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনারা যারা সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক
পেজ সূচিপত্রঃসমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক | সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক দেখাও | সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক লিখ | সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সাথে কি ধরনের সাদৃশ্য রয়েছে আলোচনা কর

ভূমিকাঃ সমাজকর্মের সাথে সমাজ বিজ্ঞানের সম্পর্ক

সমাজকর্ম একটি সমন্বয়ধর্মী সমাজবিজ্ঞান। সমাজ জীবনের সার্বিকের উন্নতি সমাজকর্মের লক্ষ্য। তাই মানব জীবনের সামগ্রিক দিক অর্থাৎ সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, দৈহিক, মানসিক ইত্যাদি দিকের উন্নতি করতে হলে সমাজকর্মীকে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান হতে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। তবে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান হতে জ্ঞান আহরণ করলেও সমাজকর্ম নিজেকে একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্কঃ সমাজকর্ম ও সমাজ বিজ্ঞানের সাদৃশ্য

সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের যে সকল বিষয় সম্পর্ক এবং মিল রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।

১। উভয় সামাজিক বিজ্ঞানঃ সমাজকর্ম এবং সমাজবিজ্ঞান উভয় সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক এ উভয় সামাজিক বিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

২। অভিন্ন বিষয়বস্তুঃ সমাজকর্ম বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, পরিবার ও বিবাহ সম্পর্ক ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানে এগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

৩। লক্ষ্যগতঃ সমাজকর্মের লক্ষ্য সমাজের মানুষের ভূমিকা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা এপ্লাইড সোসিওলজি আজ সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধান করে সমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে চাই।

৪। সমাজকর্মের জ্ঞানের উৎসঃ সমাজকর্মের একটি অন্যতম জ্ঞানের উৎস সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব সমাজকর্মে ব্যবহৃত হয়। আবার সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় অনেক সময় সমাজকর্মের জ্ঞানের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও তার কার্যকারণ আলোচিত হয়। এগুলো সমাজকল্যাণের রাও মেটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে।

৫। সমাজকর্মও সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেঃ সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে দরিদ্র, বেকারত্ব, ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি, অভিবাসন ইত্যাদি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এসব পদ্ধতির সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানকেও সমৃদ্ধ করে।

৬। ফলিত সমাজবিজ্ঞানঃ ফলিত সমাজবিজ্ঞান নামে সমাজবিজ্ঞানের যে নতুন শাখার সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে সমাজ কর্মের সাথে এর আরো ঘনিষ্ঠ +সুত্র স্থাপিত হয়েছে।

৭। সমাজবিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিক সমাজকর্মঃ সমাজবিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিক সমাজকর্ম। মানবিক সংগঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এসবের ব্যাখ্যা করা সমাজবিজ্ঞানের কাজ, সমস্যার সমাধান নয়। সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান লাভ করার প্রতি সমাজবিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান মানব কল্যাণে প্রয়োগ করে সমাজকর্ম। এদিক থেকে সমাজবিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিক হিসেবে সমাজকর্মকে আখ্যায়িত করা যায়। সমাজবিজ্ঞান তাত্ত্বিক বিষয় হিসেবে যেখানে শেষ হয়; সমাজকর্ম সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে একটি ব্যবহারিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

৮। সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও জ্ঞানগত ভিত্তি গঠনের সহায়তাঃ প্রত্যেক পেশার মতো সমাজকর্ম প্রেশারও কতগুলো মূল্যবোধ রয়েছে। এসব মূল্যবোধের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান বিভিন্নভাবে সমাজকর্মকে সহায়তা করেছে।

৯। বৈশিষ্ট্যগত সম্পর্কঃ সমাজের সমগ্র বিষয় নিয়ে আলোচনা উভয়ই বিজ্ঞানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের এক একটি দিক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান উভয়েই সমাজকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করে থাকে।

১০। উভয় সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তঃ সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি বিষয়। সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। ফলে সমাজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সামাজিক বিজ্ঞান গুলোর মধ্যেও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

১১। অভিন্ন উদ্দেশ্যঃ সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয়ের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উভয়ই সমাজের উন্নতি বিধানে কাজ করে থাকে। সমাজকর্ম সমাজের সমস্যা সমাধানে তৎপর এবং সমাজবিজ্ঞান সমাজের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে থাকে। তাই লক্ষ গত দিক থেকে তারা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

১২। উদ্ভব ও বিকাশঃ পাশ্চাত্যর ের শিল্প বিপ্লব এবং সামাজিক কুসংস্কার আন্দোলনের সময় মূল স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়। অপরদিকে, পেশাদার সমাজকর্মের জন্ম হয় শিল্পায়ন ও শহরায়ন জনিত সমস্যা সমাধানের জন্য। এভাবেই উদ্ভব ও বিকাশের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট মিল পরিলক্ষিত হয়।

১৩। সামাজিক সমস্যা মোকাবেলাঃ সমাজকর্মের অন্যতম দিক হলো মানুষকে সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর সহায়তা দান করা। সমাজবিজ্ঞান সমস্যা সম্পর্কিত জ্ঞান উদঘাটন করে সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনের সহায়তা করে থাকে।

১৪। পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কঃ সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান উভয়েই মানুষের সামাজিক সম্পর্কের উপর জোর দিয়ে থাকে। এ সম্পর্কে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, ব্যক্তির সাথে সমাজের, বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী ও পেশাজীবীদের মধ্যকার সম্পর্ককে বোঝায়।

উপসংহারঃ 

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজ কর্মের মধ্যে একদিকে যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান অন্যদিকে, তেমনি কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। উভয় যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। একটি ছাড়া অন্যটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে না। সমাজকর্মের জন্য সমাজ বিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োজন অনেক বেশি। তাতে সমাজের মানুষের উন্নতির পথ অনেক বেশি অগ্রসর হয়।

আমাদের শেষ কথা,

সমাজকর্মের সাথে সমাজ বিজ্ঞানের সম্পর্ক সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিপূর্ণ বিষয়ে ভালোভাবে এবং পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাহলে সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url