সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও | সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে সমাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনারা যারা সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা জেনে নেওয়া যাক।
সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও
পেজ সূচিপত্রঃসমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও | সমাজ বিজ্ঞান বলতে কি বুঝ | সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক

ভূমিকাঃ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও | সমাজ বিজ্ঞান বলতে কি বুঝ 

সমাজবিজ্ঞান মানুষের ব্যবহার ও পারস্পরিক সম্পর্কের বৈজ্ঞানিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। সমাজের স্বার্থে সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে সমাজকর্ম বিষয়টিকে বাইরে প্রয়োগ করাও সম্ভব নয়। তাই সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের শর্ত হিসেবে সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী। যখন একটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে চাইবে তখনই প্রয়োজন হবে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান।

সমাজবিজ্ঞানঃ 

সাধারণভাবে যে বিজ্ঞান মানব সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে। ইংরেজি Sociology শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Socious এবং Logos থেকে, যার অর্থ হচ্ছে সমাজ এবং জ্ঞান। তাই উৎপত্তিগত অর্থে বলা যায়, সমাজ সম্পর্কিত যে জ্ঞান তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে। সমাজের মানুষকে নিয়ে যে বিস্তারিত বিষয় আলোচনা করা হয় বা সমাজের মানুষের উন্নতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকেই সমাজবিজ্ঞান বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সমাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও

সমাজ বিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কয়েকটি সঙ্গা প্রদান করা হলোঃ- 

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, সমাজ বিজ্ঞান হচ্ছে সেই বিজ্ঞান যা কেবল সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করে।

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার এর মতে, সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান, যার উদ্দেশ্য হল সামাজিক কার্যাবলীর মধ্যে একটি কার্যকর সম্পর্ক নির্ণয়ের ব্যাখ্যা দান করা।

সমাজবিজ্ঞানী টি. বি. বটোমোর বলেন, সামাজিক কাঠামো সম্পর্কিত মূল ধারণা বা প্রত্যয় সমাজবিজ্ঞানের পথ নির্দেশ করে থাকে।

অধ্যাপক মরিচ জিন্সবার্গ বলেন, ব্যাপকতর অর্থে সমাজবিজ্ঞান আন্ত-মানবিক কার্য প্রক্রিয়া ও পারস্পারিক সম্পর্ক এবং তাদের অবস্থা ও ফলাফল সম্পর্কে পাঠ করে।

সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্কঃ 

সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান উভয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত দুটি শাখা। নানা কারণে এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিচে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হলোঃ-
  1. বৈশিষ্ট্যগত সম্পর্কঃ সমাজের সমগ্র বিষয় নিয়ে আলোচনা উভয়ই বিজ্ঞানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের এক একটি দিক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান উভয়েই সমাজকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করে থাকে।
  2. অভিন্ন বিষয়বস্তুঃ সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান উভয়ের বিষয়বস্তু হলো সমাজ। সমাজকে কেন্দ্র করেই তাদের বিষয়বস্তু আবর্তিত। সমাজকর্ম যেমন সমাজের মানুষকে নিয়ে কাজ করে তেমনি সমাজবিজ্ঞান ও সমগ্র সমাজ নিয়ে কথা বলে। তাই বিষয়বস্তুর দিক থেকে উভয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
  3. উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তঃ সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি বিষয়। সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। ফলে সমাজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সামাজিক বিজ্ঞান গুলোর মধ্যেও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।
  4. অভিন্ন উদ্দেশ্যঃ সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয়ের লক্ষ এক ও অবিভিন্ন। উভয়ই সমাজের উন্নতি বিধানে কাজ করে থাকে। সমাজকর্ম সমাজের সমস্যা সমাধানে তৎপর এবং সমাজবিজ্ঞান সমাজের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে থাকে। তাই লক্ষ গত দিক থেকে তারা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
  5. উদ্ভব ও বিকাশঃ পাশ্চাতর শিল্প বিপ্লব এবং সামাজিক কুসংস্কার আন্দোলনের সময় মূল স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়। অপরদিকে পেশাদার সমাজকর্মেও জন্ম হয় শিল্পায়ন ও শহরায়ন জনিত সমস্যার সমাধানের জন্য। এভাবেই উদ্ভব ও বিকাশের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট মিল পরিলক্ষিত হয়।
  6. সমাজসেবার প্রাতিষ্ঠানিক দিকঃ সমাজকর্ম তার যাবতীয় কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পাদিত করে থাকে। এজন্য সমাজকর্মকে সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এ ব্যাপারে সমাজকর্মকে সার্বিক দিক থেকে সহায়তা করে থাকে সমাজবিজ্ঞান।
  7. সমাজ বিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীদের জন্য অপরিহার্যঃ সমাজকর্মে সমাজকর্মীরা মানুষের সমস্যা সমাধান করে থাকে। এজন্য সমাজকর্মীদের সমাজের ওপর জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। সমাজ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য তাদেরকে সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে হয়। কারণ সমাজবিজ্ঞান সমাজের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সুতরাং মানব দেহের গঠন তত্ত্বের জ্ঞান ছাড়া শরীরের রোগ চিকিৎসা করা যেমন অসম্ভব তেমনি সমাজ দেহের গঠন তথ্য সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন ব্যতীত সামাজিক চিকিৎসক হিসেবে সমাজকর্মীদের পক্ষে সামাজিক ব্যাধি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
  8. সমাজবিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিক হলো সমাজকর্মঃ একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, সামাজিক বিজ্ঞান হলো তাত্ত্বিক এবং সমাজকর্ম হলো ব্যবহারিক। সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্বগত দিকগুলোকে সহজকর্ম বাস্তব রূপ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক আলোচনা যেখানে শেষ হয়। সেখানে সমাজকর্ম সেই তাত্ত্বিক বিষয়কে ব্যবহারিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
  9. সমাজবিজ্ঞানকে পরিপূর্ণতা দান করে সমাজকর্মঃ সমাজবিজ্ঞান তথ্যগত আলোচনা করে ক্ষান্ত থাকে। সমাজকর্ম সেই তত্ত্ব কথাকে নিজস্ব কৌশলের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে দেখা যায় সামাজিক পরিপূর্ণতা দিয়ে থাকে সমাজকর্ম। এজন্য সমাজ তার নিজস্ব পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করে থাকে। যা সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে পরিপূর্ণতা দানে খুবই সহায়ক।
  10. উভয়ে একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরকঃ সমাজ বিজ্ঞান যদি তত্ত্ব না দেয় তাহলে সমাজকর্ম বাস্তবে কাজ করতে পারবে না। আবার সমাজকর্ম যদি তত্ত্বকে বাস্তবায়ন না করে তাহলে সমাজবিজ্ঞান তত্ত্ব মানুষের কোন কাজে আসবেনা। এভাবে দেখা যায় এরা একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক।
  11. পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কঃ সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান উভয়েই মানুষের সামাজিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে থাকে। এ সম্পর্কে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির ব্যক্তির সাথে সমাজের বিভিন্ন দল গোষ্ঠী ও পেশাজীবীদের মধ্যকার সম্পর্ককে বুঝায়।
  12. সামাজিক সমস্যা মোকাবিলাঃ সমাজকর্মের অন্যতম দিক হলো মানুষকে সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর সহায়তা দান করা। সমাজ বিজ্ঞান সমস্যা সম্পর্কিত জ্ঞান উদঘাটন করে সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে থাকে।
  13. বৈজ্ঞানিক ভিত্তিঃ সমাজকর্ম তার চর্চা গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বিজ্ঞানের মর্যাদায় উন্নতি হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান ওক্রমে বিজ্ঞানের মর্যাদা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে এদিক থেকেও উভয়ের মধ্যে মিল রয়েছে।

উপসংহারঃ সমাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও

পরিশেষে বলা যায় সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আচার ব্যবহার বিশ্লেষণ করে থাকে। অর্থাৎ সমাজকর্ম বিষয়ে ধারণা অর্জন করতে হলে সামাজিক চাহিদা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা অত্যাবশ্যক। সমাজের মানুষের উন্নতির জন্য অবশ্যই সর্বদা সমাজকর্মের জ্ঞান সকলের মধ্যে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাহলে সমাজের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন চোখের পলকে লক্ষ্য করা যাবে।

আমাদের শেষ কথা,

সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও এ বিষয় সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিষ্কারভাবে সম্পূর্ণ বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাহলে সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url