স্মৃতির উপাদান গুলো কি কি

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগন, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে স্মৃতির উপাদান গুলো কি কি এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
স্মৃতির উপাদান গুলো কি কি
আপনারা যারা স্মৃতির উপাদান গুলো কি কি এই বিষয়ে সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন স্মৃতির উপাদান গুলো কি কি এই বিষয় নিয়ে জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ

স্মৃতির উপাদান গুলো কি? কি?
স্মৃতির প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহ কি? কি?

ভূমিকাঃ 

মনোবিজ্ঞানে স্মৃতি একটি বিশেষ আলোচিত বিষয়। দৈনন্দন জীবনের বিভিন্ন দিকে এর প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে থাকি। আমরা কি করে মনে রাখি? কেনই বা ভুলে যায়? প্রয়োজনীয় বিষয়কে কিভাবে দীর্ঘদিন ধরে মনে রাখা যায় তা জানতে আমরা সকলেই আগ্রহী। হিউম্যান ব্রেন সারা জীবন তথ্যকে স্টোর করে রাখতে চাই। আমরা বাইরের জগত থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করি সেগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখার এবং পরবর্তীতে এ তথ্যগুলোকে পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতাকে স্মৃতি বলা হয়। সহজ ভাবে বললে স্মৃতি হল, পূর্ব অভিজ্ঞতা বা শিক্ষনের সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন। পরীক্ষনের ভাষায় বলা যায়, স্মৃতি= শিক্ষণ-বিসৃতি।

স্মৃতির উপাদানঃ 

স্মৃতি কে বিশ্লেষণ করলে তার মধ্যে নিম্নলিখিত উপাদান গুলো লক্ষ্য করা যায়ঃ 

১। শিক্ষণঃ 

স্মৃতির জন্য প্রথম প্রয়োজন অভিজ্ঞতা লাভ ও শিক্ষণ। যে কোন বস্তু বা ঘটনা সম্বন্ধে আমরা কখনো অভিজ্ঞতা লাভ করেনি অথবা যা কখনো শিক্ষা করিনি, সে সম্বন্ধে কোন স্মৃতির সম্ভব নয়। উদাহরণ-যে কখনোই সাইকেল চালানো শেখেনি, তার পক্ষে সাইকেল যথাযথভাবে চালানোর স্মৃতি হতে পারে না। আবার যে কখনো আমেরিকায় যায়নি এবং হোয়াইট হাউস প্রত্যক্ষ করেনি, তার পক্ষে হোয়াইট হাউস এর স্মৃতি হতে পারে না।

২। সংরক্ষণঃ 

যখন আমরা মন দিয়ে কোন কিছু বারবার শেখার চেষ্টা করি, তখন বিষয়টি আমাদের মনে ধৃত সংরক্ষিত হয়। অর্থাৎ আমরা বিষয়টিকে মনে ধারণ করি। বিষয়টি আমাদের চেতন মনের স্তর থেকে অবচেতন মনের স্তরে চলে আসে। উচিত অভিজ্ঞতাগুলো মানসিক নির্দেশনা রূপে বা প্রতিরূপ এর আকারে অবচেতন মনে রক্ষিত হয়। এ সংরক্ষিত প্রতি রুপ পুনরোক্ত হয় বলেই স্মৃতি সম্ভব হয়।

৩। পুনরুদ্রেকঃ 

মনে সংরক্ষিত প্রতি রূপ গুলো ব্যক্ত করার মানসিক ক্রিয়াকেই পুনরুদ্রেক বা পুনরুৎপাদন বলে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে মনে জাগিয়ে তোলা বা মনে করাই হল পুনরুৎপাদন। অতীত বা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে পুনরুৎপাদন করার অর্থ হলো ঘটনার বিন্যাসটিকে পরিবর্তিত রাখা। ঘটনার পারস্পর্য বজায় রেখে ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তার প্রতিরূপ গুলোকে সেভাবে পুনরুৎপাদন করা। অনুষঙ্গের জন্যই অতিত অভিজ্ঞতার উৎপাদন গুলো সম্ভব হয়। মনোবিজ্ঞানী মেসোটি এবং পচিত এর মতে, শিক্ষনের পর সময় যত অতিবাহিত হতে থাকে আমাদের প্রত্যক্ষ পুনরুৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্ব কমতে থাকে।

৪। প্রত্যাভিজ্ঞাঃ 

অতীত অভিজ্ঞতার প্রতিরূপ গুলোর পুনরুৎপাদকেই স্মরণ ক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। যে অতীত অভিজ্ঞতার প্রতিরূপ গুলোকে পুনরু উৎপাদন করা হলো তাকে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রতিরূপ বলে চিনতে পারি। একেই বলা হয় প্রত্যাবিজ্ঞা। কোন একটি ছেলেকে রাস্তায় দেখে যদি আমার মনে পড়ে যে, ছোটবেলায় সে আমার সাথে প্রাইমারি স্কুলে পড়ত, তখন তাকে প্রত্যাভিজ্ঞ বলা হয়।

৫। স্থান কাল নির্দেশঃ 

নির্ভুল সরণ ক্রিয়া তখনই হয়, যখন ঘটনাটির স্থান কাল নির্দেশ করা যায়। অর্থাৎ স্থান-কাল জ্ঞানের পুনরুৎপাদন হয়। ঘটনাটি কোন সময়ে এবং কোথায় ঘটেছিল তা নির্ণয় করতে না পারলে স্মরণ ক্রিয়ার সাথে প্রত্যাশার প্রভেদ করা যায় না। বস্তুর পুনরুদ্রেকের সাথে সাথে যদি স্থান কাল নির্দেশিত না হয়, তাহলে বস্তুর পরিচিতি বোধ ঘটে না এবং পরিচিতি বোধ হয় প্রত্যাভিজ্ঞার প্রাণ।

৬। ব্যক্তিত্বের অভিন্যতাঃ 

স্মরণ ক্রিয়া আমাদের ব্যক্তিত্বের অভিন্যতাকে আশ্রয় করে সম্ভব হয়। বন্ধু পরিতোষের সাথে ১০ বছর আগে এক স্কুলে পড়েছিলাম। ১০ বছর পরে আজ তার কথা স্মরণ করছি। আজকের আমি আর সেদিনের আমি যে এক, উভয় যে একই ব্যক্তি, পৃথক ব্যক্তি নয় এ বোধ না থাকলে স্মরণ করে সম্ভব নয়। অবশ্য ব্যক্তিত্বের অভিন্নতা হল মনের অভিন্যতা; দেহের নয়।

উপসংহারঃ 

ওপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া বলতে যদি আমরা বুঝি পূর্বমুক্ত উপাদান গুলো সমষ্টি তাহলে ভুল হবে। স্মৃতি হলো পূর্বোক্ত উপাদান গুলোর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল, স্মৃতি। যদিও অতীত অভিজ্ঞতার যথাযথ পুনরুদ্রেক, তবু স্মৃতি প্রতিরূপের মধ্যে কিছুটা নিজস্ব নতুনত্ব থাকে।

আরো পড়ুনঃ স্মৃতি কাকে বলে

আমাদের শেষ কথা,

স্মৃতির উপাদান গুলো কি কি এই বিষয় সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিপূর্ণ বিষয়ে ভালোভাবে এবং পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতজনদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url