মনোযোগ কি? মনোযোগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মনোযোগ কি মনোযোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ছবি
আপনারা যারা মনোযোগ কি এবং মনোযোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে তারা অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ

মনোযোগ কি।
মনোযোগের বৈশিষ্ট্য।
মনোযোগ কি? মনোযোগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
মনোযোগ কাকে বলে? মনোযোগের বৈশিষ্ট্য গুলো বর্ণনা কর।
মনোযোগ বলতে কি বুঝ? মনোযোগের মানদণ্ড সমূহ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ 

প্রত্যক্ষণের সাথে সরাসরি জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক ক্রিয়া হলো মনোযোগ। মূলত যথাযথভাবে মনোযোগের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রত্যক্ষণ, শিক্ষণ, চিন্তন ইত্যাদি মানসিক প্রক্রিয়াগুলো সুচারু রূপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। কোন নির্বাচিত বিষয়কে চেতনার কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসার মানসিক প্রক্রিয়াকে মনোযোগ বলে অভিহিত করা হয়। এটি ব্যক্তির ইচ্ছার একটি বিশেষ রূপ।

মনোযোগের সংজ্ঞাঃ 

বাহ্যিক জগতের অসংখ্য উদ্দীপকের মধ্য থেকে প্রত্যক্ষনের জন্য একটি বা এগুচ্ছ উদ্দীপকের প্রতি ইন্দ্রিয় সমূহ কে কেন্দ্রীভূত করা হলো মনোযোগ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ 

মনোযোগ সম্পর্কে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে মনোযোগ সম্পর্কিত মনোবিজ্ঞানীদের দেওয়া উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ-

উড ওয়ারথ এবং মার্কুইস বলেন,

Attention is selective observation the process of getting set to persive a particular object.

জিপি গিলফোর্ড এর মতে,

মানুষ যা পর্যবেক্ষণ করতে চাই তা নির্বাচনের মানসিক প্রক্রিয়ায়ই হচ্ছে মনোযোগ।

রস ও ড্রেভারের মতে,

মনোযোগ যেমন ইচ্ছা প্রাবল্য আছে তেমনি একটি অনুভূতির লাবণ্য আছে। অর্থাৎ মনোযোগটা অনুভূতি ও ক্রিয়াশীল।

স্টাউট বলেন,

মানুষের জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়ার পিছনে যে মানসিক সক্রিয়তা কাজ করে তাই হচ্ছে মনোযোগ।

উপযুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, মনোযোগ হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমরা কোন একটি বিষয়ের ওপর আমাদের মনকে নিভিষ্ট করি এই উদ্দেশ্যে যে, বিষয়বস্তুটি সম্পর্কে আমরা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট জ্ঞান লাভ করব।
আরো পড়ুনঃ সংবেদন কি

মনোযোগের বৈশিষ্ট্যঃ 

মনোযোগের ক্ষেত্রে কতগুলো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। মনোযোগের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ 

১। ইচ্ছামূলক মানসিক প্রক্রিয়াঃ 

মনোযোগ একটি ইচ্ছা মূলক মানসিক প্রক্রিয়া। তাই এ মানসিক প্রক্রিয়াটি একটি বিশেষ দিকে চালিত হয়। এ প্রক্রিয়া চেতনাকে বস্তুর উপরে কেন্দ্রীভূত করে বস্তুর ধারণাকে সুস্পষ্ট করে।

২। মনোযোগ নির্বাচনধর্মীঃ 

একটি বিষয় নির্বাচন করা ও অপরগুলোকে বর্জন করা বা চেতনার কেন্দ্র থেকে অপসারিত করাই হলো মনোযোগের ধর্ম। কেউ যদি পড়াশোনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে তখন সে অন্যান্য শব্দ যেমন পাখির ডাক গাড়ির শব্দ ইত্যাদির দিকগুলো চেতনার কেন্দ্র থেকে বর্জন করে।

৩। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকঃ 

মনোযোগের দুটি দিক আছে। একটি ইতিবাচক ও অন্যটি নেতিবাচক। যে বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয় তা ইতিবাচক এবং যে বিষয় থেকে মন সরিয়ে নেওয়া হয় তা নেতিবাচক।

৪। সীমিত ক্ষেত্রঃ 

মনোযোগের ক্ষেত্র খুব সীমিত। কারণ একটি সময়ে আমরা কেবল একটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হতে পারি।

৫। উপযোজনমূলকঃ

মনোযোগের মধ্যে মানসিক তাৎপরতা আছে। কেননা মনোযোগ হচ্ছে বস্তুর সাথে মনের উপযোজন।

৬। মনোযোগ অস্থির ও সঞ্চারণশীলঃ 

মনোযোগ সাধারণত বস্তু থেকে বস্তুতে ঘুরে বেড়ায়। আমরা কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কয়েক সেকেন্ডের বেশি মনোযোগ ও হতে পারে না।

৭। ধারাবাহিকঃ 

মনোযোগ সঞ্চালনশীল হলেও তা ধারাবাহিক এবং একত্ব বিশিষ্ট ক্রিয়া। যেমন কোন বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হলে তা ধারাবাহিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দৃষ্ট হয়।

৮। অনুসন্ধানীঃ 

মনোযোগ সব সময় নতুন বিষয়বস্তুকে খুঁজে বেড়ায়। সাধারণত যেসব বিষয় নতুনত্ব বা অভিনব নেই সেই সব বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষিত হয় না।

৯। উদ্দেশ্যমূলকঃ

মনোযোগ বিষয়ের অস্পষ্টতা দূর করে তাকে স্পষ্ট করে তোলে। অর্থাৎ মনোযোগ সুষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট চেতনার স্বরূপ।

১০। সম্বন্ধ স্থাপনকারীঃ 

মনোযোগের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

১১। বিশ্লেষণাত্মক ও সংশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়াঃ 

কোন একটি গাছের দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে গাছের বিভিন্ন অংশ তার কান্ড তার শাখা প্রশাখা ফুল ফল প্রভৃতির বিভিন্ন অংশের প্রতি মনোযোগী হতে পারে। আবার এই বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে গাছের যে সামগ্রিক রূপ ফুটে উঠেছে সেই বিষয়ে মনোযোগী হতে পারি।

১২। অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিঃ 

মনোযোগের মধ্যে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি থাকে। এ কারণেই বাসির শব্দ শোনা মাত্রই খেলোয়াড়গণ খেলা শুরু করে দেয়।

উপসংহারঃ 

পরিশেষে বলা যায় যে, মনোযোগ একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি অসংখ্য উদ্দীপক থেকে একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি মনকে আবদ্ধ করে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকে বিষয়টি সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা। আর মনোবিজ্ঞানে মনোযোগের বৈশিষ্ট্য এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করে।
আরো পড়ুনঃ অনুভূতি কি

আমাদের শেষ কথা,

মনোযোগ কি মনোযোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিপূর্ণ বিষয়ে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতজনদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url