কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি-একটি কম্পিউটার যখন কাজ করতে থাকে তখন অবশ্যই তার পেছনে একজন মানুষের হাত থাকতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একটি কম্পিউটার কখনোই কাজ সম্পন্ন করতে পারবেনা। কম্পিউটারের সকল যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য মানুষের মেধা প্রয়োজন রয়েছে এবং কম্পিউটার পরিচালনা করার জন্য মানুষ প্রয়োজন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার া মানব বুদ্ধিমত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞানের ক্ষেত্র সমূহ এই সকল বিষয় নিয়ে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। তাহলে চলুন বেশি দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত সকল বিষয়।
পেজ সূচিপত্রঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কম্পিউটারের নিজস্ব কোন বুদ্ধি নেই। এটি শুধু নিজের কাছে সংরক্ষিত তথ্য এবং প্রোগ্রামের আলোকে কাজ করতে পারে। কোন সমস্যার আলোকে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারে না। কম্পিউটারও যাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার জন্য এর ভেতর অনেক সমস্যার সমাধান ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ রোবটিক্স কি
এটি কি বলে অফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের চিন্তাভাবনাগুলোকে কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটার বা কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রের মধ্যে রুপ দেওয়ার ব্যবস্থা।
একটা রোবটের কথা যদি চিন্তা করি, রোবটের বুদ্ধি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি। রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ফলে রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের নির্দেশ অনুযায়ী যে কোন সাধারণ কিংবা মানুষের দুঃখসাধ্য যেকোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা সংক্ষেপে এ আই বর্তমানে কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।
এ শাখায় কম্পিউটার কে মানুষের মত চিন্তাভাবনা করে অসম্পূর্ণ তথ্য ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, সমস্যার সমাধান করবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে-সে বিষয়েই গুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা চলছে। এ কারণে কম্পিউটারকে প্রোগ্রামিং ভিত্তিক যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে বুদ্ধি জিনিসটা আসলে কি।
বুদ্ধি হচ্ছে জ্ঞান আহরণ করা এবং তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা। সাধারণ প্রোগ্রামগুলো জ্ঞান আহরণ করতে পারে না। কিন্তু যেসব মেশিন বা প্রোগ্রাম এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন তারা নিজে নিজে কিছু শিখে নিতে পারে। সেগুলোকে আমরা বলি বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম বা বুদ্ধিমান মেশিন। যেমন-google search প্রোগ্রামটা একটি বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম।
আমরা কিছু সার্চ করলে এটি সার্চ হিস্টরি বয়স লোকেশন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে আমাদের সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শন করে। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এম আই টি এর John McCarthy সর্বপ্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি শব্দটি উল্লেখ করেন। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রতিভাবান কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং কে। তার করা টেস্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভিত্তি স্থাপন করে। 1950 সালে টুরিং তার এই যুগান্তরকারী পরীক্ষাটি প্রকাশ করেন। টুরিং টেস্ট হলো এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে বোঝা যায় কোন যন্ত্রের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কিনা। এই টেস্টের উত্তরে গেলে উক্ত যন্ত্রটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে বলে ধরে নেয়া হয়।
অন্যান্য প্রতিভাবান অ্যালান টুরিঙ্কে অনেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক হিসেবে উল্লেখ করলেও আসলে তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বেশি সমাদৃত। প্রোগ্রামিং ভাষা LISP,PROLOG,C/C++,CLISP,Java ইত্যাদির ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাস্তব প্রয়োগ হলো রোবট।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ক্রমে বিস্তৃত লাভ করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে কম্পিউটারের চিন্তাভাবনা গুলো মানুষের মতই হয়। মানুষ একই সময়ে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা করতে পারে না। কিন্তু কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে একই সময়ে বিভিন্ন কাজ দ্রুত করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ক্রায়ো সার্জারি কি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে যন্ত্রের মধ্যে যৌক্তিক চিন্তা জ্ঞান পরিকল্পনা শিক্ষণ যোগাযোগ উপলব্ধি এবং যন্ত্র চলাচল করার সামর্থ্য পাই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি ব্যবহারিক উদাহরণ পরিলক্ষিত হয় কম্পিউটার বা গেমসের ক্ষেত্রে। এখানে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে গেমের ক্যারেক্টারগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রদান করা হয়।
যার ফলে গেমসের ক্যারেক্টার গুলো গেম ব্যবহারকারীদের চিন্তা ও কার্যক্রমের সাথে বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনা তথা কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। যাতে করে কৃত্রিম গেমস এর মধ্যে সকলে অনেক বেশি আকর্ষিত হয়ে থাকে এবং গেমস খেলতে তাদের অনেক পছন্দ হয় সেই কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক বেশি কাজে লাগানো হয় গেমসের ক্ষেত্রে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞানের ক্ষেত্র সমূহ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকে তিনটি প্রধান এলাকায় গ্রুপ ভক্ত করা যায় এগুলো হলোঃ-
১। বুদ্ধি ভিত্তিক বিজ্ঞান
- এক্সপার্ট সিস্টেম
- লার্নিং সিস্টেম
- ফাজি লজিক
- নিউরাল নেটওয়ার্ক
- জেনেটিক অ্যালগরিদম
- ইন্টালিজেন্ট এজেন্ট
২। রোবটিক্স
- ভিজুয়াল পারসেপশন
- ট্যাকটিলিটি
- ডেক্সটারিটি
- লোকোমোশন
- নেভিগেশন
৩। ন্যাচারাল ইন্টারফেস
- ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ
- স্পিচ রিকগনিশন
- মাল্টি সেঞ্চুরি ইন্টারফেস
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
- মনুষ্যবিহীন গাড়ি এবং বিমান চালানোর ক্ষেত্রে
- জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যেমন ম্যাক্সিমা
- ক্ষতিকর বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রিয় করার কাজে
- চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন মাইসিন
- কাস্টমার সার্ভিস প্রদানে
- বিনোদন ও গেম খেলায়
- অনেক বড় কঠিন ও জটিল কাজে
আরো পড়ুনঃ সার্ভার কি
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে
- পরিকল্পনা ও সিডিউল তৈরির ক্ষেত্রে
- বিভিন্ন ডিভাইসের সূক্ষ্ম ত্রুটি শনাক্তকরণ
- প্রাকৃতিক ও খুনের সম্পদ খুঁজে বের করার কাজে
- ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও স্টক লেনদেনের ক্ষেত্রে
- বিভিন্ন অফিসে স্টাফদের প্রতিদিনের কর্মতালিকা বন্টনে
- অনলাইনে সাহায্যকারী হিসেবে ওয়েব পেজে এভাটার হিসেবে
- যানবাহনে গতির সাথে মিল রেখে গাড়ি গিয়ার পরিবর্তন অটো পাইলটের মাধ্যমে বিমান চালানো প্রভৃতি কাজে
- আদালতে বিচার কার্য পরিচালনা রায় প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি কাজে
মানব বুদ্ধিমত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য
মানব বুদ্ধিমত্তা
- মানব বুদ্ধিমত্তা সরাসরি ইন্দ্রিয় সমীহের অভিজ্ঞতা কে ব্যবহার করে তার পারদর্শিতা প্রদর্শন করে।
- এ বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিশীল।
- মানব বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে খুব সহজে প্রতিরোধ তৈরি বা অন্যকে সরবরাহ করা যায় না।
- মানব বুদ্ধিমত্তা প্রকৃতিগতভাবে প্রাপ্ত।
- মানব বুদ্ধিমত্তা চিরস্থায়ী নয় কোন কারনে এ বুদ্ধিমত্তার অবনতি ঘটতে পারে।
- মানব বুদ্ধিমত্তা ক্রমেই বিকশিত হতে পারে।
- মানববন্ধিমত্তাকে লিখে রাখা সম্ভব নয়।
- এক জাতীয় কাজ হলেও মানব বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারের বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় সমূহের অভিজ্ঞতা কে সরাসরি ব্যবহারের সুযোগ থাকে না।
- এ বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টিশীল নয়।
- , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা খুব সহজেই প্রতিরোধ তৈরি ও অন্যদের কাছে সরবরাহ করা যায়।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের দ্বারা কৃত্তিম উপায়েপ্রাপ্ত।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণত চিরস্থায়ী। কম্পিউটার পদ্ধতি ও প্রোগ্রাম বদল করা না হলে এর স্থায়িত্বের হেরফের হয় না।
আরো পড়ুনঃ ব্যান্ডউইথ কি
- স্বাভাবিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের কোন সুযোগ নেই।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত থাকে প্রোগ্রাম কোড আকারে লিখে রাখা সম্ভব।
- একই জাতীয় কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ততটা ব্যয়বহুল নয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কুফল
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ফলে মৌলিক গবেষণা ও সৃজনশীল কাজ থেকে মানুষ ধীরে ধীরে বিমুখ হয়ে পড়তে পারে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার মানবজাতির জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
- বুদ্ধিমত্তার দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ একসময় মানুষের হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
আমাদের শেষ কথা,
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সকল যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা সকল কিছু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url