ইতিহাসের পরিধি আলোচনা কর

প্রিয় পাঠকগণ আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন, আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
ছবি
আপনারা যারা ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে।

প্রশ্নঃ 

ইতিহাসের পরিধি আলোচনা কর।
ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা কর।
ইতিহাসের পরিধি যতটা বিস্তার করে সে সম্পর্কে তোমার মতামত তুলে ধর।

ভূমিকাঃ 

History is the learning by inquiry. ইংরেজি History শব্দটি গ্রিক শব্দ Historia শব্দ থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ হলো সত্য অনুসন্ধান বা গবেষণ। ইতিহাস শব্দটি সন্ধি বিচ্ছেদ করলে আমরা দেখতে পাই ইতি + হ = ইতিহ এবং অস + অত্রও = আস । অর্থাৎ ইতিহ শব্দের অর্থ হলো সমাচার বা ব্যাপার। এবং আস শব্দের অর্থ নিক্ষেপ করা। অতএব ইতিহাস শব্দের অর্থ হচ্ছে অতীতের যাবতীয় কার্যকলাপকে বর্তমানে নিক্ষেপ করা। সহজ কথায় মানব সমাজের অতীত কার্যাবলীর বিবরণ কেই বলা হয় ইতিহাস। এই ইতিহাসের পরিধি ব্যাপক এবং বিস্তৃত।

ইতিহাসের পরিধিঃ 

সাধারণ অর্থে পরিসর, পরিসীমা, সীমানা বা কার্যক্ষেত্র কে পরিধি বলা হয়। তবে ইতিহাসের পরিধি ভিন্ন অর্থে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ ইতিহাসের কার্যক্ষেত্রের সুবিশাল দিগন্ত কে বা ইতিহাসের কার্যক্ষেত্রের পরিধি যতটা বিস্তার লাভ করে তার পরিমাণগুলোকে ইতিহাসের পরিধি বলা হয়। তাই ইতিহাসের পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত। নিচে ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ-

প্রাগতি হাসিক যুগে ইতিহাসের পরিধিঃ 

প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাসের পরিসীমা নির্ভর করে ওই যুগের মানুষের কর্মপরিসর তথা পরিসীমার বিস্তার পর্যন্ত। তবে এ যুগের ইতিহাসের পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি। কারণ এযুগের মানুষ তত্ত্বগতভাবে, তথ্যগতভাবে পরিকল্পনাগতভাবে সর্বোপরি বাস্তব ও ব্যবহারিক কর্মের মাধ্যমে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেনি।
তাদের বাস্তব কর্মজীবন ছিল সংক্ষিপ্ত পরিসরে। ফলে এ যুগের ইতিহাসের পরিসীমা স্বল্প বিস্তার লাভ করেছিল। আমরা জানি ইতিহাসের মূল বিষয়বস্তু মানুষ। তাই মানুষের কর্মকাণ্ড ইতিহাস আলোচনা করে। মানুষ তার কর্মকাণ্ড নিয়ে যতদূর এগিয়ে যাবে তত দূরে ইতিহাসের আলোচনা পরিধি হবে। প্রাগতি হাসিক যুগের মানুষ তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেনি। তাই ইতিহাসের পরিধিও ততটাই এগিয়ে যেতে পারেনি।

ঐতিহাসিক যুগে ইতিহাসের পরিধিঃ 

প্রাগৈতিহাসিক যুগ পেরিয়ে যখন ঐতিহাসিক যুগে মানুষ পদার্পণ করে তখন তার কর্মকান্ডের পরিধি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। ফলে ইতিহাসের পরিধিও বেড়ে যায়। এ যুগে এসে ইতিহাসের পরিধি ক্রমবর সম্প্রসারিত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাই। এ সময় প্রাচীন যুগের নাই লিখিত ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। ফলে ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়ে ওঠে।

এবং ইতিহাসের পরিধিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় ইতিহাসের জনক কে হিরোডোটাসের আবির্ভাব ঘটে এবং ইতিহাস রচনার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। এতে ইতিহাসের কর্ম পন্থাও বেড়ে যায়। ফলে ইতিহাসের পরিধি বহুদূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এ ঐতিহাসিক আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় এবং পরিধিও ভাগ করা যায় যেমনঃ-

১। প্রাচীন যুগঃ 

প্রাচীন যুগে ইতিহাসের পরিধি চলে যায় রাজনীতির পরিমণ্ডলের আবর্তে। এ সময় রাজনৈতিক ঘটনাবলী ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে থাকে। তথা রাজনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপক বিস্তার লাভ করে যার সাথে ইতিহাসের পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পাই। এ সময় রাষ্ট্রের শাসন নীতি অর্থনীতি সমাজনীতি সভ্যতা সংস্কৃতি স্থাপত্যকর্ম ইতিহাসের পরিধি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ধর্ম ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেয়।
ফলে ধর্ম হয়ে যায় রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে এ সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছিল ইতিহাসের মূল উপজীব্য। এ সময় যদিও ঐতিহাসিকদের রচনা রাজনীতি ও যুদ্ধনীতির স্থান পেয়েছে তথাপি সমাজ অর্থনীতির সংস্কৃতি স্থাপত্য ধর্ম প্রভৃতি গুরুত্বহীন ছিল না। এটাই ইতিহাসের পরিধির অন্তর্ভুক্ত করে নেই।

২। মধ্যযুগঃ 

ইতিহাসের পরিধি মধ্যযুগে এসে আরো বিস্তার লাভ করে। কারণ এ সময় ব্যবসায়ী বাণিজ্যর আবির্ভাব ঘটে এবং সমগ্র বিশ্ব পরিচিতি লাভ হতে থাকে। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের কর্মকান্ড ব্যাপক বৃদ্ধি পায় যার সাথে সাথে ইতিহাসের পরিধি ও ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এ সময় ইউরোপের খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপিত হতে থাকে।

ইউরোপের সাথে ভারত ও আফ্রিকা মহাদেশের রাজনীতি ও সমাজনীতি স্থাপন স্থান করে নেয়। এ সময় ভারতের রাজনীতিতে ধর্মের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতবর্ষ সহ সমগ্র এশিয়াতে মধ্যযুগে ধর্ম বেশ প্রভাব বিস্তার করে এবং কোন কোন স্থানে ধর্মনীতি রাষ্ট্রনীতিতে পরিণত হয়। ফলে ইতিহাসের পরিধি ধর্ম ও রাষ্ট্রের সাথে একিভূত হয়ে যায়। 

৩। আধুনিক যুগঃ 

মধ্যযুগে ধর্মতন্ত্রের প্রভাব শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ সময় ধর্ম কর্মে নিয়োজিত পোপগন চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। ফলে পপের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ অসন্তোষ জন্ম নেয়। সুযোগে কিছু রাষ্ট্রনায়ক ধর্মতন্ত্রের প্রভাব খর্ব করে রাষ্ট্র তন্ত্রের প্রভাব পুনর প্রতিষ্ঠা করে। ফলে রাজনীতির প্রভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় এবং এর কমও বিস্তার সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া এ সময় মানুষের মধ্যে ধর্মের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতা ও তা বাদের নীতি আশ্রয় নেয়। ফলে শুরু হয় আধুনিক যুগ এবং কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে। এ যুগের কর্মকাণ্ড সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আধুনিক যুগের ইতিহাসের পরিধি কোন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ না থাকে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

এ যুগ শুরু হয় ধর্ম সংস্কার ও রেনেসাঁর মাধ্যমে। এতে মানুষের রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক জগতে যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে তার ছোঁয়া লাগে ইতিহাসের গায়ে। এবং এর ফলে ইতিহাসের পরিধিও পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক যুগ শুরু হয় ৫০ শতকে এবং তা বিংশ শতক পর্যন্ত চলে।

৪। উত্তর আধুনিক যুগঃ 

ইতিহাসের পরিধি আধুনিক যুগে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে এবং উত্তর আধুনিক যুগে এসে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। কারণ বিশ্বায়ন কথাটি প্রচারিত হয় এবং এ যুগে এবং ইতিহাসের পরিধি ও বিশ্বায়নের দিকে চলে যায়। বিশ্বায়নের ফলে সমগ্র বিশ্ব একাই ছাতার নিচে চলে আসে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বিশ্বায়নের পরিণত হতে সাহায্য করে। ফলে ইতিহাসের পরিধিতে নবযাত্রা যোগ করে এবং এ সময় সমসাময়িক কালের মানব সভ্যতার উপর ইতিহাস লেখার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়।

উপসংহারঃ 

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাসের পরিধি কোন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয়। এটা যুগ যুগ ধরে বিস্তার লাভ করেছে। সেই প্রাচীনকালে ইতিহাসের পরিধি বিস্তার লাভ শুরু হয়েছে, যা বর্তমান পর্যন্ত চলছে। আজ ইতিহাসের পরিধি বিশ্বায়নের সাথে একীভূত ওহে ইতিহাসের পরে দিও বিশ্বায়নে পরিধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। 

আমাদের শেষ কথা,

ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সকল কিছু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url