ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যত বিষয় আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনারা যারা ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চান তারা অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ছবি
আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই জেনে যেতে পারবেন ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যত বিষয়। ইতিহাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো নিয়ে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

প্রশ্নঃ

ইতিহাসের সংজ্ঞা দাও। ইতিহাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।
ইতিহাস কি? ইতিহাসের কি কি বৈশিষ্ট্য তোমার চোখে পড়ে লিখ।
ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
ইতিহাস বলতে কি বুঝ? ইতিহাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ 

ইতিহাস মানব সমাজের জন্য দর্পণস্বরূপ। ইতিহাসের যে জ্ঞান রয়েছে সে ইতিহাসের মাধ্যমে মানুষ তার অতীতের সকল বিষয়গুলো খুব সহজেই অবগত হতে পারে। অতীতের সেই পথ নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করে মানুষ বর্তমান সময়ে তার জীবনের দিক নির্দেশনা পরিচালনা করতে পারে। যা মানুষের দৈন জীবনে খুবই প্রয়োজন। আদিম কাল থেকে মানুষ যে সকল কাজ করে আসছে বর্তমান সময়ে সেই সকল কাজ এর ধরন গুলো সকল একই সে কারণেই এগুলো ইতিহাসের কারণেই মানুষ বর্তমান সময়ে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারছে। এই সকল বিষয়ের ধারাবাহিক বিবরণী হলো ইতিহাস।

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যঃ 

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য হল ইতিহাস হল মানব জীবনের অভিজ্ঞতার সঞ্চিত একটি খনি। ইতিহাস সম্পর্কে জানলে একজন মানুষের সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে একজন মানুষের অতীত সম্পর্কে সকল কিছু পরিপূর্ণভাবে জানা যাই। ইতিহাসের সর্বমূল বিষয় হচ্ছে, সমাজ ব্যবস্থার রাজনীতি আইন কানুন অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়ার দ্বারা নির্দিষ্ট সমাজের প্রকৃত রূপ বিশ্লেষণ করা। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে ইতিহাসের বিভিন্ন বিচিত্রী কাহিনী ইতিহাসের স্থাপন পায়। তবে দেশ কাল জাতি বর্ণ বিভেদে সকল ইতিহাসের বৈচিত্র কিন্তু একই রূপ নয়। তাহলে চলুন ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলোঃ-

তথ্যনির্ভরতাঃ 

ইতিহাসের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় সেটি হল তথ্য নির্ভরতা। ইতিহাস সম্পর্কে মানুষ যখন চর্চা করতে চাইবে তখন অবশ্যই সর্বপ্রথম তথ্য নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে হবে। এক কথায় তথ্যের সংগ্রহ থাকতে হবে ইতিহাস চর্চার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তথ্য ছাড়া ইতিহাস রচনা করা একদম সম্ভব নয়।

অনুসন্ধানমূলকঃ

ইতিহাসের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তথ্যের উপর নির্ভর করে অনুসন্ধান করা। কেননা শুধুমাত্র তথ্য জোগাড় করার মাধ্যমে কোন কাজ সম্ভব নয় তার অনুসন্ধানমূলক কাজ সম্পন্ন করতে হবে সুন্দরভাবে। অনুসন্ধান ছাড়া তথ্যের সঠিক যাচাই সম্ভব নয়। তাই যখনই কেউ ইতিহাস রচনা করতে চাইবে তখন অবশ্যই তাকে অনুসন্ধান করতে হবে।

আত্মউপলব্ধিমূলকঃ 

আত্ম উপলব্ধিমূলক বৈশিষ্ট্য ইতিহাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আত্ম উপলব্ধি এটা বলতে বোঝায় যে নিজেকে নতুন করে জানা বা নিজেকে জানা। যারা নিজের সম্পর্কে জানেনা তারা পরিপূর্ণ হতে পারে না জীবনে বা উন্নতি করতে পারে না তার জীবনে। ইতিহাস হচ্ছে আত্ম উপলব্ধির মূল চাবিকাঠি। কারণ ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা জাতির তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারি। আত্ম উপলব্ধির মাধ্যমে ইতিহাস অতীতের গৌরব দীপ্ত প্রপঞ্চকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে তাদেরকে নব চেতনার উদ্দীপিত করে।

সর্বজনীনতাঃ 

সর্বজনীনতা হচ্ছে যা সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। কোন ইতিহাস রচনা করতে হলে অবশ্যই তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ ইতিহাসের কোনো স্থান, কাল, পাত্র, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী ভেদে পার্থক্য হবে না। তা সকলের নিকট সমভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আর এ সর্বজনীনতা হচ্ছে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

নিরপেক্ষতাঃ 

ইতিহাসকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। একটি নিরপেক্ষ ইতিহাস একমাত্র নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক রচনা করতে পারেন। তাই নিরপেক্ষতা ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিরপেক্ষতা ইতিহাসকে অন্যান্য বিষয় থেকে আলাদা করে রেখেছে। এই নিরপেক্ষতার জন্য ইতিহাস কখনো স্বৈরাচারী শাসকদের পক্ষে গুণগান করে না। এটা মাঝামাঝি পর্যায় থেকে মানুষের মধ্যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।

ধারাবাহিকতাঃ 

ধারাবাহিকতা হচ্ছে ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি বিষয়ের ওই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত। ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে কোন বিষয়ে ছন্দপতন ঘটে। তখন ওই বিষয়ে সাফল্য ধরে রাখা অসম্ভব। ইতিহাসের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। কারণ ইতিহাসে বর্ণিত যেকোনো ব্যক্তি জাতি বা দেশের বর্ণনা অবশ্যই ধারাবাহিক হতে হবে।

সঠিকত্তঃ 

ইতিহাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সঠিকত্ত বজায় রাখা। কোন ইতিহাস যদি সঠিকভাবে রচিত না হয় তাহলে সে এর গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। গ্রহণযোগ্য ইতিহাস রচিত না হলে তা স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাই। এবং সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে।
আরো পড়ুনঃ মানসিক বয়স কি

পরিবর্তনশীলতাঃ 

মানব সভ্যতার সৃষ্টির পর থেকে পৃথিবী পরিবর্তন হচ্ছে বারবার। অর্থাৎ পৃথিবীর পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কি হলে ইতিহাসকে অবশ্যই পরিবর্তনশীল হতে হবে। নয়তো ইতিহাসকে রক্ষা করা যাবে না। মানব জীবনের বিবর্তন ক্রমোন্নতি ও বৃহৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে যখন কোন ব্যক্তি অবদান রাখেন, ইতিহাস ঠিক তখনই তার প্রতি বিশেষ মনোযোগী ও আগ্রহী হয়। যেহেতু মানব সমাজে পরিবর্তনশীল তাই ইতিহাস পরিবর্তনশীল।

মানবজাতির ক্রমবিকাশের বিবরণঃ

ইতিহাস হলো মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের বিবরণ। এর মাধ্যমে মানবজাতির ক্রমবিকাস সম্পর্কে জানা যায়। মানবজাতির ক্রমবীবর্তনের ধারাবাহিক ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকে।

অতীতের তথ্য বিবরণীঃ 

ইতিহাস মানবজাতির ঘটনাবূল অতীত বৈচিত্র্যময় কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে। ফলে অতীত সম্পর্কে জানা সহজ হয়। মানবজাতির অতীত জীবনে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করা যায়।

নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করেঃ 

ইতিহাস মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রতী করে তোলে এবং ইতিহাসের মাধ্যমে ভবিষ্যতে চলার পথ সহজ করে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ নৈতিক জীবনযাপনে এগিয়ে আসে। নৈতিকতা বর্জিত কাজের কোন সুফল আমরা ইতিহাসে দেখতে পাইনি।

বিবর্তনবাদের বিবরণঃ 

কিভাবে মানুষ বিভিন্ন পর্যায়ে অতিক্রম করে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান স্তরে এসে পৌঁছেছে তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র সম্মুখে তুলে ধরে ইতিহাস।

দেশ প্রেম জাগ্রত করেঃ 

ইতিহাস মানব সমাজকে নিজ দেশ জাতি সমাজ পুষ্টি ও রাষ্ট্রীয় জীবন সম্পর্কে অবহিত করে। যা মানুষকে দেশপ্রেমে উপলব্ধ করে দেশের অতীত গৌরব সম্পর্কে গৌরববোধ করতে শেখায়।

আবেগ বর্জিত চিন্তার অন্বেষঃ 

ইতিহাসের তথ্যচরণ বিচার বিশ্লেষণ সংযোগ ও সম্বন্ধ করনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সুশৃংখল ও নিরপেক্ষ আবেগ বর্জিত চিন্তার উন্মেষ ঘটে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শের সাথে পরিচয়ঃ 

ইতিহাস মানুষকে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের পরিবর্তে সার্বিক বিশ্বজগনিতা মানব কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তির প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

উপসংহারঃ 

উপযুক্ত আলোচনার সুবাদে বলা যায় যে, ইতিহাস অর্থ হল অতীতের গবেষণা। তবে এ গবেষণার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কারণ যদি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পাঠ করা হয় তাহলে তা সমাজ গঠনে বিরাট সহায়ক হবে। কারণ মানুষ যদি কিছু জানতে চাই তাহলে তার আগে তাকে নিজেকে জানতে হবে। আর এ নিজেকে জানার মাধ্যম হলো ইতিহাস।

আমাদের শেষ কথা, 

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সকল বিষয় আশা করছি আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার পরিচিতজনদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url