বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা আলোচনা কর

প্রিয় পাঠকগণ আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন, আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে।
ছবি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা আলোচনা কর।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্বের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

ভূমিকাঃ 

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সমর্থক ছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সম্মোহনী নেতৃত্বের অধিকারী। নেতৃত্বের গুনে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। তার দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাঙালিরা মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতা অর্জন করে। কাজেই মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাঃ 

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্তান বিভক্তি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য। পূর্ব বাংলার জনমানুষের মুক্তির জন্য তিনি দীর্ঘ 23 বছর আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়েছেন। নিচে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধে অবদান আলোচনা করা হলোঃ- 

১। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুঃ 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের মূল ভিত্তি। ভাষা আন্দোলনের সময় ১৬ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে গ্রেপ্তার হন এবং কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ভাষা আন্দোলনের শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর অধিকার আদায়ের লিপ্ত হন।

২। যুক্তফ্রন্ট বিজয় বঙ্গবন্ধুঃ 

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে যুক্তফ্রন্টের কাছে পরাজিত হয়। যুক্তফ্রন্ট ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠন করে। নির্বাচনের পর একে ফজলুল হককে বন্দী করা হলে শেখ মুজিবুর রহমান মূল নেতৃত্বে চলে আসেন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় তিনি কৃষি বন ও সমবায় মন্ত্রী ছিলেন। পূর্ব বাংলার অধিকার রক্ষায় পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

৩। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয় দফা দাবি উপস্থাপনঃ 

ছয় দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয় দফা কর্মসূচি পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি ছিল। সকল বাঙালি ছয়দা পাকে সমর্থন করে। ছয় দফা দাবি পূর্ব বাংলায় জোরালো হলে পাকিস্তান সরকার বিত সশস্ত্র হয়ে পরে। ছয় দফা দমনের জন্য পাকিস্তান সরকার দমন ও নিপীড়ন করে। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পূর্ব বাংলার ছাত্র জননেতা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ছয় দফা দাবি এত জনপ্রিয় দাবি ছিল যে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতাই পরিণত হয়। তিনি পূর্ব বাংলায় জনগণের ব্যাপক অনুগত লাভের সমর্থন হন।

৪। আগরতলা মামলাঃ 

ছয় দফা আন্দোলন যখন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে পরিণত হয় তখন ছয় দফা ভাগে পাকিস্তান সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে অভিহিত করে। শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে 1968 সালে আগরতলা মামলা দায়ের করে। আগরতলা মামলায়। শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হলে পূর্ব বাংলায় আপামর জনতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হয় বাংলার মুক্তিদাতা হিসেবে।

৫। আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলনঃ 

১৯৬৯ সালের আয়ব বিরোধী গণ আন্দোলন বাংলার ইতিহাসের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইয়ুব খানের পতন স্বাধীন বাংলাদেশে অর্জনের পথ প্রশস্থ হয়। এ গণ আন্দোলন শেখ মুজিবকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। গণ আন্দোলনে আইয়ুব খানের বিদায় ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার বিজয়। আন্দোলনের ফলে শেখ মুজিবর রহমান মুক্তি লাভ করলে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে রেসকোর্স ময়দানে তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

৬। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বঃ 

পাকিস্তানের সরকার বিরোধী আন্দোলনের মূল ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ বাংলার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

৭। ৭০ এর নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব

৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গনের স্পষ্ট ইঙ্গিত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। এ বিজয়ী বাঙালি জাতির স্বাধীনতার দাবি জোরালো করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ বিজয়ের মুখ্য ভূমিকা পালন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৮। অসহযোগ আন্দোলনঃ 

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে পাকিস্তান সরকার বিত সশস্ত্র হয়ে পড়ে। তারা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানা শুরু করে। অহেতুক সময় ক্ষেপণ করে। বঙ্গবন্ধু ছয় দফার দাবিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে অটল থাকেন। রাজনৈতিক সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। বাঙালি অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু অটল থাকেন। ফলে জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এর পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। পূর্ব বাংলায় সর্বত্র জনগণ এক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলে, অসহযোগ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু মুখ্য ভূমিকা ও নেতৃত্ব প্রদান করে।

৯। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বঃ 

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন দক্ষ ভাবে। তিনি সাথেই মার্চ ভাষণের পূর্বেও বাংলার জনগণের জন্য মুক্তির দিকনির্দেশনা মূলক ভাষণ দেন এবং মুক্তি সংগ্রামে সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাই। ৭ই মার্চ ভাষণের পর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করলে ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বারোটা ত্রিশ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতা ঘোষনার পর পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহর রাত একটা দশ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার দিক নির্দেশনা মোতাবেক মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।

উপসংহারঃ 

পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধু ত্যাগ ও নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও দাবি আদায়ে বঙ্গবন্ধু একাধিকবার কারাবরণ করেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। তার সম্মোহনী নেতৃত্বও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অপরিহার্য ছিল।

আমাদের শেষ কথা,

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা সকল কিছু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url